ফেসবুক বাংলাদেশ: ২০১৭ সালের কোন এক দিন সকাল পৌণে সাতটায়
এসে লাইনে দাঁড়িয়েছে শাওন, এখন সাড়ে দশটা, লাইন যেয়ে মেইনরোড পর্যন্ত
ঠেকেছে, আগারগাঁও জাতীয় ফেসবুক অফিসের সামনে প্রতিদিনই এমন ভিড়বাট্টা হয়
আজকাল। মাঝখানে কয়েকবার দুয়েকজন দালাল এসে শাওনকে চোখ টিপি দিয়ে গেছে, শাওন
পাত্তা দিচ্ছেনা, সে দালাল ছাড়াই ফেসবুক একাউন্ট খুলবে সেটা তার জেদ।
দালালদের দৌরাত্ন্য খুব বেশী, দালাল এড়াতে ফেসবুক একাউন্ট বানানোর দায়িত্ব
সেনাবাহিনীর উপর ন্যস্ত করার চিন্তা ভাবনা চলছে।
জাতীয় ফেসবুক অফিসে এটা শাওনের তৃতীয় দিন, এর আগে দুইবার এসেছিলো। যারা দালাল ধরেছিলো তাদের কিছু করতে হয়নাই, কাগজপত্র নিয়ে দালাল ভেতরে ঢুকে গেছে তারপর হাসি হাসি মুখ করে সবাইকে এসে টোকেন দিয়ে দিয়েছে, টোকেন পাওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে সেটাও দালালরাই দেখবে বলেছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর আবার অফিসে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর ছবি দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলতে হয়। দালালদের কিছু টাকা বেশী দিলে নাকি দুই তিনবার ছবি তোলে ভালো ছবিটা ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে দেয় আর নইলে একটা ছবি তুলে সেটাই দেয়, সেই ছবি বেশীরভাগ সময়েই জাতীয়তা পরিচয়পত্রের ছবির মতো হয়। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারী আইনকানুন বেশ কড়া, সরকারকে না জানিয়ে প্রোফাইল পিকচার পাল্টালে মোবাইল কোর্টে অনধিক দেড় মাসের কারাদন্ড হয়, আবার নিয়ম মেনে প্রোফাইল পিকচার পালটানো ঝামেলা, নোটারী পাবলিক দিয়ে এফিডেভিট করতে হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়, তারপর ফার্স্টক্লাশ গেজেটেড অফিসার দিয়ে ছবি সত্যায়িত করাতে হয়।
দালাল ধরে নাই বলেই ফেসবুক অফিসে আজ শাওনের তৃতীয় দিন, দালাল ধরবে না সেটা তার জেদ, দালালের ফি ই বা সে পাবে কোথায়, এম্নিতেই ফেসবুক একাউন্ট খোলার যে সরকারী রেট সেই টাকা জোগাড় করতেই বাপের পকেটে হাত দিতে হয়েছে। সে বার্থ সার্টিফিকেট, জাতীয়তা পরিচয়পত্র, এসএসসি/এইচএসসি সার্টিফিকেট, কমিশনার থেকে সত্যায়িত করে আনা নাগরিকত্ব সনদ এর ফটোকপি আর পাসপোর্ট সাইজ দুই কপি ছবি জমা দিয়েছিলো। প্রথমবার কাগজপত্র দেখে সরকারী অফিসার গম্ভীর স্বরে বলেছে এইগুলা কিছুই হয়নাই, বার্থ সার্টিফিকেট নরমাল কাগজে ফটোকপি করে আনলে গ্রহনযোগ্য হবেনা, অফসেট কাগজে ফটোকপি করে আনতে হবে। দ্বিতীয়বার তাকে ফেরত যেতে হয়েছে ফটোকপিতে কালি বেশী হয়ে গেছে বলে, অফিসার বলেছে সেইটা নাকি ন্যাচারাল দেখাচ্ছে না পাল্টায়ে আনতে। সে জানতে চেয়েছিলো ফটোকপির ন্যাচারাল লুক জিনিসটা কি, তবে অফিসার ব্যস্ত ছিলো তাই উত্তর দেয়ার সময় ছিলোনা দূর দূর করে হাত নেড়ে চলে যেতে বলেছে।
বেলা তিনটা। আগারগাঁও জাতীয় ফেসবুক অফিস থেকে বেরিয়ে এসে সামনের টঙ এ একটা কলা আর বনরুটি খায় শাওন। সবশেষে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধূয়ার সাথে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তার আজো হয়নি, কি কারন দেখিয়েছে অফিসার সেটা বড় কথা না, দালাল ছাড়া কাজ হবেনা সেইটাই বড় কথা। বাড়ির পথ ধরে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ এই ফেসবুক তার না, ফেসবুক বড়লোকদের, যাদের টাকা আছে কিংবা লিঙ্ক লবিং আছে তাদের… বাসস্ট্যান্ডে বিটিসিএল এর বিলবোর্ডে চোখ পড়ে তার, বাংলাদেশ সরকার প্রযোজিত, আইসিটি মিনিস্ট্রি পরিচালিত ‘একটি বাড়ি একটি ফেসবুক একাউন্ট’ প্রকল্পের বিলবোর্ড। অভিমানে চিকচিক করে শাওনের চোখ…
(সংগৃহীত)
জাতীয় ফেসবুক অফিসে এটা শাওনের তৃতীয় দিন, এর আগে দুইবার এসেছিলো। যারা দালাল ধরেছিলো তাদের কিছু করতে হয়নাই, কাগজপত্র নিয়ে দালাল ভেতরে ঢুকে গেছে তারপর হাসি হাসি মুখ করে সবাইকে এসে টোকেন দিয়ে দিয়েছে, টোকেন পাওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে সেটাও দালালরাই দেখবে বলেছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর আবার অফিসে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর ছবি দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলতে হয়। দালালদের কিছু টাকা বেশী দিলে নাকি দুই তিনবার ছবি তোলে ভালো ছবিটা ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে দেয় আর নইলে একটা ছবি তুলে সেটাই দেয়, সেই ছবি বেশীরভাগ সময়েই জাতীয়তা পরিচয়পত্রের ছবির মতো হয়। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারী আইনকানুন বেশ কড়া, সরকারকে না জানিয়ে প্রোফাইল পিকচার পাল্টালে মোবাইল কোর্টে অনধিক দেড় মাসের কারাদন্ড হয়, আবার নিয়ম মেনে প্রোফাইল পিকচার পালটানো ঝামেলা, নোটারী পাবলিক দিয়ে এফিডেভিট করতে হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়, তারপর ফার্স্টক্লাশ গেজেটেড অফিসার দিয়ে ছবি সত্যায়িত করাতে হয়।
দালাল ধরে নাই বলেই ফেসবুক অফিসে আজ শাওনের তৃতীয় দিন, দালাল ধরবে না সেটা তার জেদ, দালালের ফি ই বা সে পাবে কোথায়, এম্নিতেই ফেসবুক একাউন্ট খোলার যে সরকারী রেট সেই টাকা জোগাড় করতেই বাপের পকেটে হাত দিতে হয়েছে। সে বার্থ সার্টিফিকেট, জাতীয়তা পরিচয়পত্র, এসএসসি/এইচএসসি সার্টিফিকেট, কমিশনার থেকে সত্যায়িত করে আনা নাগরিকত্ব সনদ এর ফটোকপি আর পাসপোর্ট সাইজ দুই কপি ছবি জমা দিয়েছিলো। প্রথমবার কাগজপত্র দেখে সরকারী অফিসার গম্ভীর স্বরে বলেছে এইগুলা কিছুই হয়নাই, বার্থ সার্টিফিকেট নরমাল কাগজে ফটোকপি করে আনলে গ্রহনযোগ্য হবেনা, অফসেট কাগজে ফটোকপি করে আনতে হবে। দ্বিতীয়বার তাকে ফেরত যেতে হয়েছে ফটোকপিতে কালি বেশী হয়ে গেছে বলে, অফিসার বলেছে সেইটা নাকি ন্যাচারাল দেখাচ্ছে না পাল্টায়ে আনতে। সে জানতে চেয়েছিলো ফটোকপির ন্যাচারাল লুক জিনিসটা কি, তবে অফিসার ব্যস্ত ছিলো তাই উত্তর দেয়ার সময় ছিলোনা দূর দূর করে হাত নেড়ে চলে যেতে বলেছে।
বেলা তিনটা। আগারগাঁও জাতীয় ফেসবুক অফিস থেকে বেরিয়ে এসে সামনের টঙ এ একটা কলা আর বনরুটি খায় শাওন। সবশেষে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধূয়ার সাথে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তার আজো হয়নি, কি কারন দেখিয়েছে অফিসার সেটা বড় কথা না, দালাল ছাড়া কাজ হবেনা সেইটাই বড় কথা। বাড়ির পথ ধরে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ এই ফেসবুক তার না, ফেসবুক বড়লোকদের, যাদের টাকা আছে কিংবা লিঙ্ক লবিং আছে তাদের… বাসস্ট্যান্ডে বিটিসিএল এর বিলবোর্ডে চোখ পড়ে তার, বাংলাদেশ সরকার প্রযোজিত, আইসিটি মিনিস্ট্রি পরিচালিত ‘একটি বাড়ি একটি ফেসবুক একাউন্ট’ প্রকল্পের বিলবোর্ড। অভিমানে চিকচিক করে শাওনের চোখ…
(সংগৃহীত)